বাড়িয়ে দাও ভরসার হাত
সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী: ক্রেডিট, হোয়্যার ক্রেডিট ডিউ।
চিত্র ১- আন্দুল রোডের ধারে কর্পোরেট হাসপাতাল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে একমনে আগের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দেখছেন মধ্যবয়সী চক্ষু শল্যচিকিৎসক। উল্টোদিকে উদ্বিগ্ন আমি আর পরিজন। আগের সব ওষুধ বন্ধের নিদান দিয়েছেন বেশ খানিকক্ষণ পরীক্ষার পরে। রেমিডি,স্রেফ আই-ম্যাসাজ। সঙ্গে চেতাবনি, অপ্রয়োজনে ফিজ দিয়ে তাঁকে যেন না দেখাতে যাই। বলে কী! হ্যাঁ, কাজও হয়েছিল তাঁর টোটকায়। এই ডাক্তার-রোগী মুষলপর্বে, বেসরকারি হাসপাতালেও এমন মানবিকতা! সত্যিই দেখেছিলাম সেদিন।
কাট টু ২০০৯। এমনই এক বসন্তে টকটকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া আর পলাশ চারপাশ ঝলসে দিচ্ছে। এদিকে আমার ওই আপনজনের চোখও রগড়ে লাল। সঙ্গে কড়কড়ে ভাব আর অনবরত জল ঝরা। গেলাম গেরামভারী চক্ষুবিশেষজ্ঞের চেম্বারে। দিল্লির নামজাদা সরকারি হাসপাতালের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার। “কী করে এনেছেন?” বলেই যুগপৎ আশ্বাসবাণী। আবার আগের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দেখেই তাচ্ছিল্যের ভাব। খসখস করে নতুন আইড্রপ। পরের কয়েকমাস শুধু চেম্বার আর ঘর। কিন্তু যে কে সেই। প্রথমদিন আগের ডাক্তারের যে ওষুধ দেখে হেসেছিলেন, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন এবার। এরপরেই গিয়েছিলাম আন্দুল রোডের ওই কর্পোরেট হাসপাতাল।
চিত্র ২- এবারও ঘটনাস্থল বেসরকারি হাসপাতাল। শরণাপন্ন এক এন্ডক্রিনলজিস্ট তথা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের। এবং এবারও আত্মীয়ের সঙ্গী আমিই। পাক্কা ১ মাসের মাথায় ডেট মিলেছে। নির্দিষ্ট শিডিউলের ২ ঘন্টা দেরিতে এসেই ডাক্তারের অভিজ্ঞ চোখ জরিপ করলো চেম্বারের ভিড়। অতএব, পেশেন্ট পিছু মিনিটদুয়েক। আর আমাদের তো টেস্ট লিখতে যেটুকু। দিন পনেরো বাদে প্রায় “ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা ছিঃ” করে, দায়সারা দেখে আবারও একই টেস্টের ফরমান। কী বুঝলেন জিজ্ঞেস করায় সটান জবাব, 'বলতে বাধ্য নই'। এত অহং!
ফ্ল্যাশব্যাক ২০১২। নার্সিংহোমের আই সি ইউ-এ অচেতন মা। ডাক্তারবাবু, আপনার সঙ্গে পরিচয়ের সেই প্রথমদিনটা ভুলি কীকরে! সন্ধ্যায় দেখে যাওয়ার পরেও অত রাতে (প্রায় ১২ টা) আপনি আবারও কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে এসেছিলেন মাকে দেখতে। ভরসার হাতটা রেখেছিলেন পিঠে। মুহূর্তে দুশ্চিন্তা গায়েব।
একি শুধুই ওই হিপোক্রিটিক ওথ পালন? পেশাদারিত্ব? নাকি মানবিকতা? নাকি চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের প্রচলিত ভাবনার মূলে সপাটে কষাঘাত। আসলে সেদিন দেখিয়েছিলেন আপনারা এমনই। আপনাদের এমনটাই হওয়া উচিত। যাঁরা করেননা, এক্সেপশনাল তাঁরা। হোক না তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ক্লিশে হয়ে গেলেও শুধু এটুকুই বলতে পারি, মানসিকতা বদলানো দরকার দুপক্ষেরই। আমাদের থেকে যেমন আরও পেশেন্স কাম্য (তবেই না পেশেন্ট!)। আবার আপনারাও নিজেদের এলিট মনে করে,ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। ক্রমশ চিড় খাচ্ছে পারস্পরিক ভরসার জায়গাটা। বিশ্বাস করেই হোক বা দায়ে পড়ে রোগীরা যখন সঁপে দিচ্ছেন আপনাদের কাছে, তখন “আমি তোমাদেরই লোক”, এই ভরসা দেওয়াটাও কিন্তু আপনাদেরই দায়িত্ব। প্লিজ, প্লিজ, আরেকবার চেষ্টা করুননা “জাদু কি ঝাঁপ্পি”টা দেওয়ার!
চিত্র ১- আন্দুল রোডের ধারে কর্পোরেট হাসপাতাল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে একমনে আগের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দেখছেন মধ্যবয়সী চক্ষু শল্যচিকিৎসক। উল্টোদিকে উদ্বিগ্ন আমি আর পরিজন। আগের সব ওষুধ বন্ধের নিদান দিয়েছেন বেশ খানিকক্ষণ পরীক্ষার পরে। রেমিডি,স্রেফ আই-ম্যাসাজ। সঙ্গে চেতাবনি, অপ্রয়োজনে ফিজ দিয়ে তাঁকে যেন না দেখাতে যাই। বলে কী! হ্যাঁ, কাজও হয়েছিল তাঁর টোটকায়। এই ডাক্তার-রোগী মুষলপর্বে, বেসরকারি হাসপাতালেও এমন মানবিকতা! সত্যিই দেখেছিলাম সেদিন।
কাট টু ২০০৯। এমনই এক বসন্তে টকটকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া আর পলাশ চারপাশ ঝলসে দিচ্ছে। এদিকে আমার ওই আপনজনের চোখও রগড়ে লাল। সঙ্গে কড়কড়ে ভাব আর অনবরত জল ঝরা। গেলাম গেরামভারী চক্ষুবিশেষজ্ঞের চেম্বারে। দিল্লির নামজাদা সরকারি হাসপাতালের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার। “কী করে এনেছেন?” বলেই যুগপৎ আশ্বাসবাণী। আবার আগের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দেখেই তাচ্ছিল্যের ভাব। খসখস করে নতুন আইড্রপ। পরের কয়েকমাস শুধু চেম্বার আর ঘর। কিন্তু যে কে সেই। প্রথমদিন আগের ডাক্তারের যে ওষুধ দেখে হেসেছিলেন, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন এবার। এরপরেই গিয়েছিলাম আন্দুল রোডের ওই কর্পোরেট হাসপাতাল।
চিত্র ২- এবারও ঘটনাস্থল বেসরকারি হাসপাতাল। শরণাপন্ন এক এন্ডক্রিনলজিস্ট তথা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের। এবং এবারও আত্মীয়ের সঙ্গী আমিই। পাক্কা ১ মাসের মাথায় ডেট মিলেছে। নির্দিষ্ট শিডিউলের ২ ঘন্টা দেরিতে এসেই ডাক্তারের অভিজ্ঞ চোখ জরিপ করলো চেম্বারের ভিড়। অতএব, পেশেন্ট পিছু মিনিটদুয়েক। আর আমাদের তো টেস্ট লিখতে যেটুকু। দিন পনেরো বাদে প্রায় “ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা ছিঃ” করে, দায়সারা দেখে আবারও একই টেস্টের ফরমান। কী বুঝলেন জিজ্ঞেস করায় সটান জবাব, 'বলতে বাধ্য নই'। এত অহং!
ফ্ল্যাশব্যাক ২০১২। নার্সিংহোমের আই সি ইউ-এ অচেতন মা। ডাক্তারবাবু, আপনার সঙ্গে পরিচয়ের সেই প্রথমদিনটা ভুলি কীকরে! সন্ধ্যায় দেখে যাওয়ার পরেও অত রাতে (প্রায় ১২ টা) আপনি আবারও কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে এসেছিলেন মাকে দেখতে। ভরসার হাতটা রেখেছিলেন পিঠে। মুহূর্তে দুশ্চিন্তা গায়েব।
একি শুধুই ওই হিপোক্রিটিক ওথ পালন? পেশাদারিত্ব? নাকি মানবিকতা? নাকি চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের প্রচলিত ভাবনার মূলে সপাটে কষাঘাত। আসলে সেদিন দেখিয়েছিলেন আপনারা এমনই। আপনাদের এমনটাই হওয়া উচিত। যাঁরা করেননা, এক্সেপশনাল তাঁরা। হোক না তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ক্লিশে হয়ে গেলেও শুধু এটুকুই বলতে পারি, মানসিকতা বদলানো দরকার দুপক্ষেরই। আমাদের থেকে যেমন আরও পেশেন্স কাম্য (তবেই না পেশেন্ট!)। আবার আপনারাও নিজেদের এলিট মনে করে,ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। ক্রমশ চিড় খাচ্ছে পারস্পরিক ভরসার জায়গাটা। বিশ্বাস করেই হোক বা দায়ে পড়ে রোগীরা যখন সঁপে দিচ্ছেন আপনাদের কাছে, তখন “আমি তোমাদেরই লোক”, এই ভরসা দেওয়াটাও কিন্তু আপনাদেরই দায়িত্ব। প্লিজ, প্লিজ, আরেকবার চেষ্টা করুননা “জাদু কি ঝাঁপ্পি”টা দেওয়ার!
Comments
Post a Comment