অর্ধমৃতের উপলব্ধি

সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী: উত্তরে ফেল, হাত-সাইকেল। আবার, আবারও গালভরা এক্সিট পোলকে (বিশেষত উত্তরপ্রদেশ নিয়ে) বলে বলে গোল দিল এবারের জনমত। এই প্রথায় অবিশ্বাস না থাক, অনিশ্চয়তা আরেকটু জোরালোই হলো। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, আগামী ভোটে আবারও সংবাদমাধ্যমে একইভাবে প্যানেলিস্টরা বসবেন। বুথ ফেরত সমীক্ষা চলবে। সার্ভে মেলা না মেলা তো ভবিষ্যতের গর্ভে।

চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো এই সমীক্ষারও তো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। তাহলে বারবার ফল না মেলার কারণ কী? ডাক্তাররা রোগ ধরতে না পারলে যদি গাফিলতি, তাহলে সংবাদমাধ্যম জনগণের নাড়ি না বুঝলে তা কি শুধুই ব্যর্থতা?

আসলে উত্তরটা অত সহজ নয়। অথচ কী অনায়াসে আমরা গাফিলতি আর ব্যর্থতাকে এক করে ফেলছি। বিশেষত চিকিৎসাক্ষেত্রে। কয়েকজনের গাফিলতিকে হাতিয়ার করে সব ডাক্তারকে ভিকটিমাইজড করা যেমন মোটেই কাজের কথা নয়। আবার অনেকসময় চিকিৎসকের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়াকে গাফিলতি বলে চালানোও কি যুক্তিযুক্ত?

মানছি, ‘ঐতিহাসিক’ স্বাস্থ্য-সিদ্ধান্তে (অত্যুৎসাহীরা আবার ফেব্রুয়ারি বিপ্লব বলছেন!) বেসরকারি হাসপাতালের স্বেচ্ছাচারিতায় লাগাম পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু পিঠ বাঁচাতে এরা ফাঁক যে খুঁজবেই, হলফ করা যায়।

যেকোনও রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠার ভয়ে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল আপৎকালীন ভর্তি নাও নিতে পারে (শুনছি ঘটছেও)। সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসার ঝুঁকি নেবেন না ডাক্তাররাও (আশঙ্কা অমূলক নয়)। সর্বোপরি তৈরি হবে তোলাবাজির নতুন মডেল। যেযার এলাকায় ‘কেস সেটল’ এর জন্য প্রতিপত্তি দেখাবেন দাদা-দিদিরা।

নিন্দকেরা বলে, এ’সমাজে দুই শ্রেণী (রাজনীতিক আর চিকিৎসক) শপথ নিয়েই ভাঙার প্রতিযোগিতায় নামেন (সবাই সমান নয়)। আপাতত দুপক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত। আসুন আমরা, মানে অর্ধমৃত উলুখাগড়ার দল দিন গুনি যূপকাষ্ঠে নিজেদের নম্বর আসার অপেক্ষায়।

Comments