ফিরে দেখা দেড় দশক



সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী: ঠিক ১৫ বছর আগে। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৫-এ লেখাটি (সঙ্গের পেপার ক্লিপিং দ্রষ্টব্য) প্রকাশের পরেই আমার সাংবাদিকতার সলতে পাকানো শুরু। আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণী। 'বর্তমান' সংবাদপত্রে রবিবারের "হযবরল" পাতায় প্রকাশিত হয় লেখাটি। তার আগে কোনওদিনই লেখালেখির চেষ্টাও করিনি কোনও পত্রপত্রিকায়। এমনকি স্কুল ম্যাগাজিনেও। 


স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে মনে পড়ছে, পুজোর মাসখানেক আগে হবে হয়তো, কোনও এক রবিবাসরীয় সকালে 'বর্তমান'-এ বিজ্ঞাপন বেরোয় বিষয়ভিত্তিক লেখার। আমি স্কিপ করে গেলেও মায়ের চোখ এড়ায়নি। আমার খুব একটা লেখার ঝোঁকও ছিল না, বলা ভাল, মায়ের প্রবল ইচ্ছাতেই শেষমেশ লিখে বর্তমানের দপ্তরে পাঠাই। তারপর ভুলেও গিয়েছিলাম সে সম্বন্ধে। হঠাৎই সেবছর (২০০৫)-এর ২৫ সেপ্টেম্বর চোখে পড়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে আমার লেখাটিও প্রকাশিত হয়েছে। নিজের নাম প্রথম ছাপার অক্ষরে দেখার সেই সুখানুভূতি...! 


জীবনের মোড় ঘোরে। সাদামাটা রেজাল্টের মধ্যমেধার (নাকি নিম্নমেধার?) ছাত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে সাংবাদিকই হবে। সাংবাদিক তো হবো ভাবলাম, কিন্তু কীভাবে? 


হয়তো কাকতালীয় ভাবেই সে'বছর স্কুলের বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অতিথি হয়ে আসেন সাংবাদিক সুজিত রায়। লাজুক ছেলেটি কিছুটা সাহসে ভর করেই তাঁকে জানায় সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছের কথা। সুপরামর্শ মেলে। তাঁর লেখা সাংবাদিকতার বিভিন্ন বই আজও আমার সঙ্গী। 


পরবর্তীতে সাংবাদিক শঙ্খ (ভট্টাচার্য) দা আলাপ করিয়ে দেয় চিত্রসাংবাদিক অনুপ (ভট্টাচার্য) দার সঙ্গে। তাঁর সূত্রেই যোগাযোগ আমার সাংবাদিকতার শিক্ষাগুরু সম্পাদক-সাংবাদিক রাজীব (ঘোষ) স্যারের সঙ্গে। 


সাংবাদিক হেমন্ত (জানা) দার মাধ্যমে আবার পরিচয় হয় সাংবাদিক-সম্পাদক অপরূপ চক্রবর্তীর সঙ্গে। রিপোর্টিং, কাগজের খুঁটিনাটি শেখা অপরূপ দার হাত ধরেই। এখনও প্রতিমুহূর্তে শিখছি ওঁর থেকে। 


বলা যায়, একদিকে রাজীব স্যার যেমন আমায় শিখিয়েছেন নিউজ, রিপোর্টাজ, ফিচার লেখা, তেমনই দিয়েছেন সংবাদ সম্পাদনার পাঠ। আর অপরূপ দা হাতেকলমে রপ্ত করিয়েছেন ফিল্ড রিপোর্টিং। আবার কাগজের পেজ মেকিং, সংবাদপত্র পরিচালনার বিদ্যা আয়ত্ত তাঁর হাত ধরেই। রাজীব স্যার আর অপরূপ দা না থাকলে আমি কতটা সাংবাদিক হতাম, বা আদৌ সাংবাদিক হতে পারতাম কিনা, আজ আমি নিজেও সন্দিহান। 


এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার পাঠ নিতে গিয়ে পেয়েছি বিশ্বজিৎ মতিলাল, পল্লব মুখোপাধ্যায়, স্বপন কুমার ব্যানার্জি প্রমুখ শিক্ষকদের। পরবর্তীকালে সাংবাদিকতার বিভিন্ন কর্মশালায়, কোর্সে কখনও শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি সুজিত (রায়) দাকে। কখনও আবার রথীন্দ্রমোহন (বন্দ্যোপাধ্যায়) বাবুকে। কখনওবা নীতীশ (ভট্টাচার্য) স্যারকে। নামের তালিকা দীর্ঘ। কখনও শিখেছি প্রেস ক্লাব তথা বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের সিনিয়রদের থেকে। কখনওবা 'আজকাল'-এর জ্যেষ্ঠদের কাছে। কখনও আবার অন্যান্য সংবাদসংস্থার বরিষ্ঠদের থেকে। শিখি সহকর্মী, কনিষ্ঠদের কাছেও। 


২০০৫-এর ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম লেখা প্রকাশের পর সেবছরেই ফ্রিল্যান্সিং সাংবাদিকতার শুরু স্থানীয় সংবাদপত্রে। বিগত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে চলার পথে মধুর ও তিক্ত দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে, হচ্ছে, হয়তো হবেও। উভয় অভিজ্ঞতা থেকেই শিখেছি, শিখছি। সমৃদ্ধ হচ্ছে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার। 


নেহাত ঘটনাচক্রেই আমার সাংবাদিকতায় প্রবেশ, তা-ও দেখতে দেখতে দেড় দশক। ডাউন মেমরি লেনে হাঁটতে হাঁটতে ভিড় করছে অজস্র স্মৃতি। আজ সেই ঝাঁপি খুলে কিছুটা নস্ট্যালজিয়ায় আচ্ছন্ন। এত দীর্ঘ ব্যক্তিগত বক্তব্য বা অনুভূতি আমি আগে কখনও পাবলিক ডোমেনে জানাইনি। নিজের প্রথম লেখাটি এখন পড়লে খুবই কাঁচা হাতের মনে হয়। তবু প্রথমবার ছাপার অক্ষরে নিজের নাম তো! আলাদা অনুভূতি। এরপরে বিগত দীর্ঘ ১৫ বছরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে (স্থানীয় থেকে জাতীয়) বহু লেখা, ছবি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্রথম লেখার আবেশ, অনুভূতি বোধহয় এক্সেপশনাল! 


লেখায় কারওর নাম যদি অনুল্লেখ থাকে বা উহ্য থাকে তা একান্তই অনিচ্ছাকৃত। গত দেড় দশকের সাংবাদিকতা জীবনে চলার পথের প্রত্যেক শিক্ষক ও সহযোগীকে প্রণাম ও কৃতজ্ঞতা।  

Comments